✍️ প্রতিবেদক: Sohag Hasan | প্রকাশিত: 27 Jul, 2025 09:45 AM | বিভাগ: সারাবাংলা | 👁️ ভিউ: 29
স্কুল ছুটির পর বড় বোন তাহিয়া আশরাফ নাজিয়া বের হতে কেন দেরি করছে, তা দেখতে গিয়েছিল আরিয়ান আশরাফ নাফি। আর তখনই যুদ্ধবিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে দগ্ধ হয় দুই ভাই–বোনই। দুজনকেই নেওয়া হয় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। নাজিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। আর নাফির ছোট্ট শরীরের প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছিল—৯৫ শতাংশ।
রাজধানীর কামারপাড়ায় রাজাবাড়ি দক্ষিণপাড়া কবরস্থানে এই ভাই–বোনকে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয়েছে। নাজিয়া মারা গেছে ২২ জুলাই, আর নাফি মৃত্যুর কাছে হার মানে ২৩ জুলাই।
নাজিয়া উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। আর নাফি ছিল তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।
বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি থাকার সময় নাজিয়া জানতে চেয়েছিল, ভাই কেমন আছে? পরিবারের সদস্যরা বলেছিলেন, ‘তোমার ভাই ভালো আছে, সুস্থ আছে।’ এ কথাকে ‘সত্য’ ভেবেছিল নাজিয়া। কিন্তু মৃত্যুই দুই ভাই–বোনের জন্য এখন একমাত্র ‘সত্য’। আর একমাত্র স্বজনেরাই জানেন, এ সত্য মানা কতটা কঠিন! দুই সন্তানকে হারিয়ে মা তাহমিনা আক্তার, বাবা আশরাফুল ইসলাম বাক্রুদ্ধ।
টেলিফোনে অনুমতি নিয়ে গতকাল শনিবার রাজধানীর কামারপাড়ায় রাজাবাড়ি পুকুরপাড়ে নাজিয়া–নাফিদের বাসায় যান এ প্রতিবেদক। কথা হয় ওদের খালা তানজিনা আক্তারের সঙ্গে। বললেন, ‘সন্তানদের মৃত্যু, আগুনে পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া লাশের বর্ণনা দিতে আর ইচ্ছে করছে না আমাদের! আমাদের আর কোনো চাওয়াপাওয়া নেই, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। ক্ষতিপূরণ বা অন্য কিছু চাওয়ারও নেই।’
নাজিয়া–নাফির সব আবদারই ছিল মায়ের কাছে। মা ওদের স্কুলে আনা–নেওয়া করতেন। ২১ জুলাইও তাহমিনা সন্তানদের স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলেন। নাফি মায়ের কাছে চলেও এসেছিল। পরে নাজিয়া কেন দেরি করছে, তা দেখতে আবার স্কুলের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল নাফি। তাহমিনার চোখের সামনেই ঘটে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা, যে ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাঁর দুই সন্তানকে চিরদিনের জন্য।
দুর্ঘটনার পর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করা হয়। সেখান থেকে বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে দুই ছেলে–মেয়েকে পান।
তানজিনা জানালেন, নাজিয়ার বই বাসার যে কক্ষে ছিল, ২০ জুলাই রোববার সেই কক্ষের দরজার তালা লেগে (লক) গিয়েছিল। ফলে সে স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ (হোমওয়ার্ক) করতে পারেনি। সে জন্য পরদিন ২১ জুলাই সোমবার স্কুল ছুটির পর নাজিয়াকে ‘ডিটেনশনে’ নিয়েছিলেন (স্কুলের পড়া শেষ করিয়ে নেওয়ার জন্য)। তা না হলে সে–ও সময়মতো স্কুলের ফটকে মায়ের কাছে চলে আসত।
তাহমিনা আক্তার অন্তঃসত্ত্বা। আগামী মাসে সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। আশরাফুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য।
নাজিয়া–নাফির খালা তানজিনা বললেন, ‘ইউটিউবে সেদিনের ঘটনার নানা ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ (শনিবার) আগুনে ঝলসে যাওয়া দুই শিশুর ভিডিও দেখে নিশ্চিত হলাম, এরা তো আমাদের নাজিয়া আর নাফি। আগে চিনতে পারিনি। এ ভিডিওগুলো দেখে ওদের মা–বাবা কারও সঙ্গে কথা বলছেন না, খাওয়াও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন।’